সোমবার ● ১৩ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » অর্থবাণিজ্য » পাটকল লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়, দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভুলনীতি : বাম জেট
পাটকল লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়, দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভুলনীতি : বাম জেট
ঢাকা :: বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে উদ্যোগে আজ ১৩ জুলাই ২০২০ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সমাবেশ শেষে ডেমরা লতিফ বাওয়ানী জুট মিল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধের প্রতিবাদে এবং বন্ধ বা পিপিপি নয়, আধুনিকায়ন করে পাটকল চালু রাখার দাবিতে এই পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে নেতা-কর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন সহ পদযাত্রা শুরু হয়ে গুলিস্তান আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে পথসভা অনুষ্ঠান শেষে বাস যোগে চিটাগাং রোডে যায়। সেখান পথসভা শেষে পুরনো ডেমরা রোড দিয়ে পদযাত্রা করে করিম জুটমিল গেটে আরও একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পদযাত্রা করে লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের গেটের সামনে গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশ ও পথসভা সমূহে বক্তব্য রাখেন সিপিবি‘র উপদেষ্টা ও লতিফ বাওয়ানী জুট মিল সিবিএ‘র সাবেক সভাপতি কমরেড শহীদুল্লাহ চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, সিপিবি‘র প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল্লাল আল কাফি রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) নেতা মানস নন্দী, ইউসিবিএল এর নজরুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের হামিদুল হক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, লোকসানের অজুহাতে ২৬টি রাষ্ট্রীয় পাটকল সরকার বন্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ লোকসানের প্রকৃত কারণ কি তা চিহ্নিত করে দূর করার কোন উদ্যোগ সরকার নেয়নি। নেতৃবৃন্দবলেন, লোকসানের জন্য শ্রমিকরা দায়ী নয়, দায়ী সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট ও ভুলনীতি। এর দায় জনগণ নেবে কেনো?
নেতৃবৃন্দ বলেন, যখন সারা পৃথিবীতে পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা বাড়ছে, যখন কৃত্রিম তন্তু, পলিথিন পরিহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে সময়ে পাটকল বন্ধ করা জাতির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। পাট এবং পাটকল আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে সম্পর্কিত। ফলে পাটকল বন্ধ করা মুক্তযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকারের সাথেও বিশ্বাস ঘাতকতা করা। আমাদের সংবিধানেও রাষ্ট্রীয়খাত প্রধান, ২য় সমবায়, ৩য় ব্যাক্তিখাত অথচ সরকার ব্যক্তিখাত কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান কে লংঘন করে চলেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, লোকসানের মূল কারণ পুরোনো যন্ত্রপাতি, অদক্ষ ও মাথাভারী প্রশাসন, সময়মতো অর্থ ছাড় ন করা, পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ না করা এবং দুনীতি, লুটপাট। ফলে আধুনিকায়ন করে লোকসানের কারণ সমূহ দূর করে পাটকল লাভজনক করা সম্ভব।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার পিপিপির নামে জনগণের সম্পদ ব্যক্তি মুনাফার হাতে তুলে দিতে চাচ্ছে। আগেও পিপিপির মাধ্যমে বহু কারখানা ব্যক্তিখাতে দেয়া হয়েছে। তার অভিজ্ঞতা কি? সেগুলোর অনেকগুলো বন্ধ, কেউ কেউ চুক্তি ভঙ্গ করেছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার এমন সময়ে পাটকল বন্ধ ঘোষণ করলো যখন পাটের সৌসুম। ইতিমধ্যে বন্ধ ঘোষণার পর পাটের দাম মণ প্রতি প্রায় ৪০০/ ৫০০ টাকা কমে গেছে এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের ৪০ লাখ পাট চাষী। ফলে পিপিপি বা বন্ধ নয়, আধুনিকায়ন করে পাটকল চালুরাখার দাবি জানান নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, এমনিতেই আমাদের কাঁচা পাট ভারতে পাচার হয়, রাষ্ট্রীয় পাটকল বন্ধ হওয়ায় কাঁচাপাট পাচার বাড়বে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতকেই লাভবান করবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ৪৮ বছরে ব্যাংক ডাকাত ঋণ খেলাপিদের ৪৫ হাজার কোটি টাকা সরকার মাফ করে দিয়েছে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গত ১০ বছরে উৎপাদন না করেও বসিয়ে রেখে তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ভর্তুকী দিয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। অথচ ৪৮ বছরে ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা পাটকলে লোকসান দিতে হয়েছে বলে সোরগোল তোলা হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার অজুহাত হিসেবে লোকসানকে বড় করে দেখে। কিন্তু এর সাথে যুক্ত শ্রমিক পরিবারের জীবিকা, সরকারকেগত ৪৮ বছরে কত টাকা বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল ও ট্যাক্স হিসাবে দিয়েছে? পাটচাষী ও শ্রমিক, কারখানার সাথে যুক্ত পরিবার, তাদের মত কত মানুষের জীবিকা চলে এই পাটকলের উপর সেটা দেখা হয় না।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় পাটকর বন্ধের গণবিরোধী সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে পাটকল আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় চালু রাখার দাবি জানান। অন্যথায় পাটকল শ্রমিক, পাটচাষী ও দেশ প্রেমিক জনগণকে ঐকবদ্ধ করে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার মাধ্যমে পাটকলসহ জাতীয় সম্পদসমূহ রক্ষা করা হবে। নেতৃবৃন্দ আগামী ২০ জুলাই ২০২০ সকাল ১১ টা থেকে ১২ টা ১ ঘন্টা বঙ্গভবন থেকে গণভবন পর্যন্ত মানবপ্রাচির এবং দেশব্যাপি মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশের কর্মসূচী সফল করার আহবান জানান।