বৃহস্পতিবার ● ৯ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর অপসারন না করায় প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না : বাম জোট
ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর অপসারন না করায় প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না : বাম জোট
ঢাকা :: ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি-লুটপাট-অব্যবস্থাপনা নিরসন, স্বাস্থ্য সেবা খাতের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও স্বাস্থ্য সেবা খাতের মাস্ক, পিপিই, চিকিৎসা সরঞ্জাম, করোনা টেষ্ট ও চিকিৎসা নিয়ে দুর্নীতিবাজ মুনাফাখোরদের গ্রেফতার-বিচার ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং করোনা টেষ্টের ফি বাতিল করে বিনামূল্যে সকল নাগরিকের করোনা টেষ্ট ও চিকিৎসা প্রদান, বেসরকারী হাসপাতাল অধিগ্রহন করে সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আজ ৯ জুলাই ২০২০ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে এগারো টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে মিছিল সহকারে সচিবালয়াস্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অভিমুখে এগুতে থাকলে লিংক রোডে পুলিশ মিছিলে কাটাতারের বেরিগেড দিয়ে বাঁধা দেয়। পরে সেখানেই বিক্ষোভ সমাবেশ চলতে থাকে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড বজলুর রশীদ ফিরোজ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি‘র সহকারী সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ জহির চন্দন, বাসদ (মার্কসবাদী) র মানস নন্দি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, গণসংহতি আন্দোলনের বাচ্চু ভুঁইয়া, কমিউনিস্ট লীগের নজরুল ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের কমরেড হামিদুল হক ও গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির শহিদুল ইসলাম সবুজ।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন করোনা মোকাবেলায় শুরু থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। একদিকে ব্যর্থতা আর সমন্বয়হীনতা পুরা পরিস্থিতি কে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গেছে। তার সাথে আছে দুর্নীতি-লুটপাট। এ প্রক্রিয়ায় গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। করোনা, নন করোনা কোন রোগেরই চিকিৎসা পাচ্ছেনা জনগন। এ ব্যর্থতার দায় নিয়ে মন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিৎ। এই ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদে থাকার কোন নৈতিক অধিকার নেই। নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবের উপস্থিতিতে ডিজি হেলথ- করোনা চিকিৎসার জন্যে রিজেন্ট নামক বেসরকারী ভূয়া হাসপাতালের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। ২০১৪ সাল থেকে যে হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। তারা করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে টেষ্ট না করেই ৬ হাজার ভূঞা রিপোর্ট দিয়েছে। বিনা পয়সায় সরকারী খরচে করোনা রোগী চিকিৎসার কথা থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসার খরচ নিয়েছে লাখ লাখ টাকা, আবার সরকারের কাছেও ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বিল জমা দিয়েছে। করোনাকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ষ্টীকার গাড়িতে লাগিয়ে ঘুরছে। এটা কি করে সম্ভব হয়েছে? আর ভুঞা রিপোর্টে করোনা সংক্রমন বা মৃত্যুর দায় বহন করবে কে?
নেতৃবৃন্দ বলেন মন্ত্রী আমলাসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতায় এই দুর্নীতি করা হয়েছে। শুধু তাই নয় রিজেন্টের মালিক শাহেদ আওয়ামী লীগের নেতা এর আগেও এম.এল.এম কম্পানির নামে ৫০০ কোটি টাকা জনগনের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছিল। তার নামে ঢাকায় ৩২ টি মামলাও আছে এরপরও টকশোতে দেশবাসীকে জ্ঞান দিয়ে বেরিয়েছে। অথচ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি এই প্রতারকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করে আরও বড় অপরাধ করার সুযোগ দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, আমলা, পুলিশের আইজি, র্যাবের ডিজিসহ ক্ষমতাসীনদের সাথে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। এই ছবিগুলিই প্রমাণ করে ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়েই এ ধরণের অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
নেতৃবৃন্দ বরেন, শুধু রিজেন্ট নয়, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, প্রশান্তি ক্লিনিক এসব বেসরকারী হাসপাতাল জনগনকে জিম্মি করে, পকেট কাটছে, ডাকাতি করছে। আওয়ামী লীগের নেতারা ত্রাণ চুরি করছে। মাস্ক, পিপিই, চিকিৎসা সরাঞ্জাম নিয়ে দুর্নীতি করছে। মিঠু সিন্ডিকেট পুরো স্বাস্থ্য খাতের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। শোনা যায় বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পুত্র, পূর্বের মন্ত্রীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কের জোরেই গত কয়েক বছরে মিঠু, যন্ত্রপাতি সরবারহ না করেই খালি বাক্স দিয়ে বিল বাবদ ৯০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শুধু তাই নয় এরা দেশের সকল মানুষকে যেমন করোনা সংক্রমনের আশংকায় ফেলেছে তেমনি বিদেশেও দেশের ভাবমূর্তী ক্ষুন্ন করেছে। এই রিজেন্ট ও জে.কে.জি‘র ভূঞা রিপোর্ট নিয়ে যারা বিদেশ গেছে ঐসব দেশে তাদের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসায় ইতালি, ফ্রান্স, স্পেনসহ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে ‘ভাইরাস বোমা’ আখ্যায়িত করে ফ্লাইট বিচ্ছিন্ন করেছে।
সমাবেশে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর পদত্যাগ, দুর্নীতিবাজ ডিজি, কর্মকর্তাদের অপসারন-বিচার, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী, রিজেন্টের মালিক শাহেদ, মিঠুসহ সিন্ডিকেটের গ্রেফতার বিচার, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত এবং বেসরকারী হাসপাতাল অধিগ্রহণ করে বিনামূল্যে করোনা টেষ্ট ও চিকিৎসা প্রদানও একই সাথে উক্ত দাবিতে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সর্বস্তরের জনগনের প্রতি আবেদন জানিয়ে বলেন, এখনো ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রীর অপসারন না করায় প্রধানমন্ত্রীও এই ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না।