মঙ্গলবার ● ২৩ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিলাম, দুর্যোগের সময়টায় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য : ডা. ফেরদৌস
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছিলাম, দুর্যোগের সময়টায় দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য : ডা. ফেরদৌস
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা ডা. ফেরদৌস খন্দকার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হয়েছেন। গত রবিবার সকালে ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টার থেকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন পূর্ণ হওয়ায় তিনি মুক্তি পেলেন। তবে তিনি শিগগরিই যুক্তরাষ্ট্র ফেরত যাবেন বলে জানিয়েছেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সকালে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ডা. ফেরদৌস। তিনি বলেন, অবশেষে কোয়ারেন্টাইন মুক্ত হলাম আমি। কেটে গেলো ১৪টি দিন। সময়তো কাটবেই। থেকে যাবে কেবল স্মৃতি। এই মুহূর্তে কোন অভিযোগ নয়, কেবল ধন্যবাদই দিতে চাই সবাইকে। যারা গত ১৪টি দিন আমার সাথে ছিলেন। বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়েছেন, মানসিকভাবে শক্ত থাকতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তবে একথা আমাকে বলতেই হবে যে, শুরুটা বেশ কঠিনই ছিল আমার জন্যে। আমার বিরুদ্ধে ‘অহেতুক’ এবং ‘মিথ্যা অভিযোগে’ বিরাট ঝড় উঠেছিল। সব ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ঝড়ও হয়তো থেমে গেছে।
যা বলছিলাম, দেশে আসার পর আমাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে দেয়া হয়েছে; এই বিষয়টি আমি প্রথম পাঁচদিন মানতেই পারছিলাম না। কেননা আমার এন্টিবডির সনদ ছিল। তখন মানসিকভাবে রীতিমতো বিদ্ধস্ত হয়ে পড়েছিলাম। পরিবার, সহকর্মী, বন্ধু, সুধীজন, ছাত্রলীগের সহযোদ্ধারা, সাংবাদিক এবং দেশের মানুষের সহায়তা ও সমর্থন আমাকে সাহস জুগিয়েছে।
ডা. ফেরদৌস বলেন, দেশে এসেছিলাম কয়েক সপ্তাহ দেশবাসীর জন্যে কাজ করবো বলে। সাথে ছোট্ট একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে তুলে যাবো, এমন আশা ছিল। সেই লক্ষ্যেই দুই থেকে তিন সপ্তাহের জন্যে এসেছিলাম। যদিও সময় কিছুটা ক্ষেপন হয়ে গেছে। এরপরও আমি মনে করি, কোন আক্ষেপ নেই আমার। দ্রুততম সময়ের মধ্যে কিছুটা কাজ করে এবার চলে যেতে চাই। তবে সাথে নিয়ে যাবো গত দুটি সপ্তাহে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু ও অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যেসব সৈনিক ভাইয়েরা আমার সাথে ছিলেন, তারা অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। অনেক সহযোগিতা করেছেন। আপনাদের মমতা কোনদিন ভুলবার নয়। সেই সাথে কুয়েত প্রবাসী কিছু ভাই শেষের দিকে কোয়ারেন্টাইনে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের ভালোবাসায় ভরা স্মৃতিগুলোও বাকি জীবন আমার সাথে থাকবে। কখনো যদি দেখা হয়, নিশ্চয়ই ভালো লাগবে; বুকে জড়িয়ে ধরবো আপনাদের। দেখা না হলেও, আপনাদেরকে আমার সবসময় মনে থাকবে।
মহামারি করোনার সময় দেশে সেবার ব্রত নিয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডাক্তার বলেন, দেখুন আমি অতি সাধারণ একজন চিকিৎসক। তবে দেশকে, দেশের মানুষকে খুব ভালোবাসি। এসেছিলাম, দুর্যোগের এই সময়টায় কেবলই দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। কোন রাজনৈতিক অভিলাষ বা ইচ্ছা আমার ছিল না; নেইও। ফলে যারা তেমনটি ভেবেছিলেন, আশা করছি আপনাদের ভুলটা ভেঙেছে। বাংলাদেশের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সম্মুখসারির যোদ্ধারা করোনার এই সময়টায় রীতিমতো জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন। তাদের আত্মত্যাগ, এই জাতি সবসময়ই মনে রাখবে। সামনের দিনগুলোতেও তারা এমনিভাবে লড়ে যাবেন বলে আমার বিশ্বাস।
কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত হলেও শিগগরিই যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যাচ্ছেন ডা. ফেরদৌস। তিনি বলেন, আমি এই মুহূর্তে স্বাস্থ্য বিষয়ক ছোট্ট একটি সেটআপ করে দ্রুতই নিউইয়র্কে ফিরে যাবো। কারো বিরুদ্ধে আমার কোন অভিযোগ নেই। মায়ের বিরুদ্ধে সন্তানের কোন অভিযোগ থাকে না। আমারো নেই। আবারো দেখা হবে। ভালোবাসা বাংলাদেশ। সবাই ভালো থাকুন। নিরাপদে থাকুন। আপনাদের মঙ্গল হোক।
এর আগে বাংলাদেশর মানুষকে সেবা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের সুপরিচিত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. ফেরদৌস খন্দকার গত রবিবার (৭ জুন) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে (স্থানীয় সময়) ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পরে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যায়। ঢাকার ব্র্যাক ট্রেনিং সেন্টারে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে তাকে।
এদিকে ডা ফেরদৌসকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর পর তার পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা ধরনের আলোচনা চলছিল। তবে তিনি দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে, সেগুলোকে তিনি মিথ্যা বলে দাবি করেন।
তবে বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক চিকিৎসক তখন বলেছিলেন, ডা. ফেরদৌসের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকলেও অ্যান্টিবডি টেস্ট পজিটিভ। ফলে তার করোনা হয়েছিল এটি বোঝা যায়। বর্তমানে তার শরীরে ভাইরাস এখনো ‘অ্যাক্টিভ’ আছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়া জন্য ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।