শুক্রবার ● ১৯ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » রাঙামাটিকে অবিলম্বে রেডজোন ঘোষনা করে লকডাউনের দাবি জানিয়েছেন জুঁই চাকমা
রাঙামাটিকে অবিলম্বে রেডজোন ঘোষনা করে লকডাউনের দাবি জানিয়েছেন জুঁই চাকমা
রাঙামাটি :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় মহামারী করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, বাড়ছে প্রাণহানি। গত ৩১ মে প্রথম মৃত্যুর পর প্রতি সপ্তাহে যোগ হচ্ছে মৃত্যু তালিকায়। গত ৬ মে প্রথম শনাক্তের মাত্র ৪২ দিনে মোট আক্রান্ত ১৪৬ জন এবং কাপ্তাই, ভেদভেদী, রিজার্ভ বাজার ও শান্তি নগর এলাকায় শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু। রাঙামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে ৯টি উপজেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে । জেলা সদরেই আক্রান্ত ৭১ জন ক্প্তাাই উপজেলায় ২৭জন। শনাক্তমুক্ত রয়েছে সবচেয়ে দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিক উপজেলা বরকল।
সরকারের ঘোষিত সাধারন ছুটির ৭৫ দিন অঘোষিত লকডাউন চলাকালে জেলার সর্বস্তরের জনগণের সীমিত চলাচেলের কারণে অনেকটা সীমিত ছিল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কিন্তু গত ৩০ মে সাধারন ছুটি ও লকডাউন শিথিল হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। চিহ্নিত রেড জোন ও ইয়োলো জোনের লোকজন প্রতিদিন ঢুকছে বীনা বাধায়। ফলে আক্রান্ত ও সংক্রমনের ঝুঁকি বাড়ছে আশংকাজনকভাবে। অত্যন্ত আশংকার বিষয় হচ্ছে করোনায় অধিকতর সংক্রমিত ও আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্স ও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। যারা করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সম্মুখযোদ্ধা। অথচ জেলায় করোনা আক্রান্তদের চিকিৎস সেবা দেওয়ার পর্যাপ্ত সুবিধা ও নেই। জেলায় একটি সরকারী হাসপাতাল ও একটি সরকারী মেডিকেল কলেজ থাকলেও মেডিকেল কলেজের কোন সুফল পায়নি জেলাবাসী। হাসপাতালেও নেই করোনা চিকিৎসা সামগ্রী।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সংগঠক ও রাঙামাটি জেলা গণতদারকি কমিটির সদস্য সচিব জুঁই চাকমা বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জেলা রাঙামাটির বরকল উপজেলা শনাক্তমুক্ত রয়েছে ভালো দিক। কিন্তু এর অর্থ এটা নিশ্চিত নয় বরকলে করোনায় আক্রান্ত নেই। দুর্গম অঞ্চল, যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন নি¤œ চিকিৎসা ব্যবস্থা আরো নি¤œতর। অনেকে হয়তো আক্রান্ত হয়ে রয়েছেন অথচ দুর্গম ও অপ্রতুল চিকিৎসা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে না। করোনাকালে সকল পাড়া গ্রাম চলাফেরা সীমিত (বিশেষ করে পাহাড়ী গ্রামগুলো) তাই সঠিকভাবে তথ্য পওয়াও যাচ্ছেনা। তাছাড়া করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার হাতিয়ার জেলা হাসপাতালেও তো নেই। তিনি বলেন, রাঙামাটি জেলা পরিষদ এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আমাদের দাবি রাঙামাটি জেলা হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধার আওতায় আনা, জেলা সদরে এবং প্রত্যেক উপজেলায় করোনা শনাক্তের জন্য ল্যাব স্থাপন করা। যাতে নমুনার ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়। কারণ রাঙামাটি জেলার বেশীরভাগ উপজেলা দুর্গম এবং অর্থনৈতিকভাবে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
জেলায় করোনা মহামারীর সংক্রমন ভয়াবহ আকার ধারন করার আগে এবং অধিক মৃত্যুর ঝুঁকি এড়াতে অবশ্যই প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে রাঙামাটি পৌরসভা এবং অধিকতর সংক্রমিত উপজেলা ও এলাকাগুলো রেডজোন ঘোষণা করে কঠোর লকডাউন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, আজ ১৮ জুন বৃহষ্পতিবার রাত ৮ টা পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা শনাক্ত ১৪৬, মৃত্যু ৪, মোট কোয়ারেন্টাইনে ৩১২৯ জন। হোম কোরেন্টাইনে ২০৩৮ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ১০৯১ জন। এরমধ্যে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছেন ৩০৩৮ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ৯১ জন। আইসোলেশনে রয়েছেন ২১ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬৬ জন।
এ পর্যন্ত ১৭৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশ ইন্সষ্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পাওয়া গেছে ১৪৫৯ জনের, রিপোর্ট অপেক্ষমান আছে ২৭৮ জনের। তথ্যটি সিএইচটি মিডিয়াকে নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের করোনা ফোকাল পারসন ডা. মোস্তফা কামাল।
জেলাবাসীর আতঙ্ক আক্রান্তের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দেশের সর্ববৃহৎ জেলা রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে আজ পর্যন্ত একটিও ফোরহেড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার নাই বলে জানা গেছে। করোনা টেষ্টের জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য সাধারন মানুষের দাবি থাকা সত্ত্বেও ল্যাব স্থাপনের কোন অগ্রগতি নেই। তাই করোনা সংক্রমন সহনীয় রাখতে বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলাবাসীর দাবি উঠেছে পিসিআর ল্যাব স্থাপন, আইসিইউ ও ফারহেড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার এর ব্যবস্থা করা।