বৃহস্পতিবার ● ১৯ আগস্ট ২০২১
প্রথম পাতা » আন্তর্জাতিক » তালেবানদের বিজয়ে আফগান জনগণের স্বাধীনতার মুক্তি, নারী অধিকারসহ গতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে
তালেবানদের বিজয়ে আফগান জনগণের স্বাধীনতার মুক্তি, নারী অধিকারসহ গতান্ত্রিক অধিকারের ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগ-উৎকন্ঠার জন্ম দিয়েছে
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক আজ গণমাধ্যমে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেছেন আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে এশিয়ার এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ ও নতুন অস্থিরতা দেখা দেবে। এই অঞ্চলের দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, ভিয়েতনামের সাম্রাজ্যবাদী মার্কিনীদের লজ্জাজনক পরাজয়ে পর আফগানিস্তানেও আগ্রাসী মার্কিন দখলদার বাহিনীর লজ্জাকর রাজনৈতিক ও সামরিক পরাজয় ঘটেছে। তাদের পরাজয়ের ঘন্টা আগেই বেজে গিয়েছিল। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তা সম্পন্ন হল। টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর যুদ্ধবাজ মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেভাবে আফগানিস্তানে সামরিক আগ্রাসন চালিয়ে যেভাবে তাদের দখলদারিত্ব কায়েম করেছে, এক ট্টিলিয়ন ডলারের বেশী খরচ করে দুই দশক ধরে তাদের তাবেদার সরকারকে বহাল রেখেছে তালেবানদের ক্ষমতা দখলে তার অবসান ঘটেছে সত্য; কিন্তু তালেবানদের এই পুনরুত্থানের মধ্য দিয়ে দুনিয়ার শান্তিপ্রিয় মুক্তিকামী মানুষের মধ্যে নতুন উদ্বেগ-উৎকন্ঠারও জন্ম দিয়েছে। আফগানিস্তানে আগামী দিনগুলোতে মানবিক বিপর্যয়েরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, তালেবানদের ঘোষিত শরীয়া আইনের সাথে কিভাবে আফগান নারী সমাজসহ আফগান জনগণের স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত হবে সেটা এখন বড় রাজনৈতিক বিষয়। গত দুই দশকে তাবেদার সরকারের আমলেও আফগান নারীরা যেটুকু অধিকার ও মর্যাদা অর্জন করেছে তা অব্যাহত থাকবে কি না তা নিয়েও গুরুতর সংশয় দেখা দিয়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতার কারণে নারী ও শিশুদের উপর নতুন করে নিপীড়নের রাস্তা প্রশস্ত হবে কিনা তা নিয়েও উদ্বেগ তৈরী হয়েছে।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদলে আফগানিস্তানে এশিয়ার বৃহৎ শক্তিধর দেশসমূহের আধিপত্য বিস্তারের নতুন ক্ষেত্র হয়ে উঠবে কিনা;’ সশস্ত্র জেহাদী সংগঠনসমূহের নতুন চারণভূমি হয়ে উঠবে কিনা তা নিয়েও উৎকন্ঠা রয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতাসীন হবার মধ্য দিয়ে অনেক যৌক্তিক কারণে ক্ষমতার এই পালাবদলকে ঘিরে অনেকেরই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া, সমালোচনা ও উৎকন্ঠা থাকতে পারে। কিন্তু এটা সত্য যে, প্রত্যেক দেশের জনগণের বিহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজেদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, শাসন পদ্ধতি, সর্বোপরি নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার রয়েছে। প্রত্যেক দেশের জনগণের নিজেদের সাধারণ ইচ্ছা ও পছন্দমাফিক সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ রয়েছে। জনগণের সার্বভৌম এই ক্ষমতাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে আফগানিস্তানের নতুন সরকার বা তার অনুসৃত পদক্ষেপসমূহ অন্যদেশ ও জনগণের নিরাপত্তা, শান্তি বা স্থিতিশীলতা বিনষ্টের কারণ হয়ে উঠবে তা নিশ্চয় গ্রহণযোগ্য হবে না।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানের ঘটনা আরও এককবার প্রমাণ করেছে যে, জনগণের সাধারণ ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে কেবল সশস্ত্র বাহিনী, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, প্রশাসন ও বিদেশী মদদে চাপিয়ে দেয়া জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা ও শাসকেরা শেষ পর্যন্ত টেকে না। শাসনের পিছনে যদি জনগণের রাজনৈতিক সমর্থন না থাকে, রাজনৈতিক সংকটের বিশেষ মুহুর্তে সেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা তাসের ঘরের মত কিভাবে ভেঙ্গে আফগানিস্তানের ঘটনা তার সর্বশেষ উদাহরণ।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, দখলদারিত্বের গত দুই দশকে সামাজিক সুরক্ষা, গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ, নারী অধিকার, ক্রীড়া, শিক্ষাসহ সামাজিক অগ্রগতির সূচকে যেটুকু অর্জন রয়েছে তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইতিবাচক ভূমিকা পালনের অবকাশ রয়েছে। আফগানিস্তানে সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয় রোধেও জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায় এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।