বৃহস্পতিবার ● ১৮ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » পরিস্থিতির যদি বদল না ঘটে তাহলে বিক্ষোভের ধরণও পাল্টে যাবে : জোনায়েদ সাকি
পরিস্থিতির যদি বদল না ঘটে তাহলে বিক্ষোভের ধরণও পাল্টে যাবে : জোনায়েদ সাকি
ঢাকা :: গত ১৬ জুন মঙ্গলবার বেলা ১২টায় এ গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১:৩০ এ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত পথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বক্তব্য রাখেন দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভুইয়া, কেন্দ্রীয় সদস্য এ্যাডভোকেট জান্নাতুল মরিয়ম তানিয়া এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন। সমাবেশ পরিচালনা করেণ সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু।
পথসভা শেষ করে দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির নেতৃত্বে একটি মিছিল তোপখানা রোড, পুরানা পল্টন হয়ে সচিবালয়ের দিকে যেতে চাইলে পুলিশের বাধার সম্মুখিন হয় এবং এখনেই সমাপনি বক্তব্য রাখেন প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।
জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে বলেন, ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয়। কিন্তু সরকার তখন গুরুত্বের সাথে নেয় নাই। তাদেও সমস্ত মনোযোগ নিবদ্ধ ছিলো মুজিব শতবর্ষের কর্মসূচিকে ঘিরে। সরকারের চরিত্র যাই হোক না কেন, রাতের আঁধারে ক্ষমতায় আসলেও মহামারী মোকাবেলায় আমরা সরকারকে সহযোগিতা প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের দল থেকে এবং জোট থেকে সর্বদলীয় পরামার্শ সভা ডাকা হয়েছিলো। কিন্তু সেখানে সকল দল অংশ নিলেও সরকারের কোন প্রতিনিধি আসেনি। সরকার যদি আগাম পদক্ষেপ নিতো তাহলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হতো না। তিনি আরো বলেন, ৪৯ দিনের একটি কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়ন করা গেলে আজকে আমাদের এই পরিণতি হতো না। দিনের আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষদের খাদ্য ও নগদ অর্থের চাহিদা মিটিয়ে একটি কার্যকর লকডাউন বাস্তবায়ন করলে এখন আমরা নিরাপদে মানষের জীবন ক্ষয় না করে অর্থনীতি খুলে দিতে পারতাম। সমস্ত রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে ২ কোটি পরিবারে ২ মাসের খাদ্য ও মাসের ন্যূনতম ৫ হাজার করে টাকা পৌছে দিতে আমাদের সাকুল্যে লাগতো ৪০ হাজার কোটি টাকা। বিনিময়ে আমরা পেতাম একটি কার্যকর লকডাউন। কিন্তু গত তিন মাসে সাধারণ ছুটির নামে সরকার যে নাটক করেছে তাদে প্রতিদিন ৩ হাজার কোটি করেলে প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হয় নাই।
জোনায়েদ সাকি তাঁর বক্তৃতায় আরো বলেন, সরকার উদ্যোগ নিলে মার্চ এবং এপিল মাসের মধ্যে সারা দেশে অন্তত ১০ হাজার পিসিআর ল্যাপ স্থাপন করে ফেলতে পারতো। প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ পরীক্ষা করাতে পারলে দেশের পরিস্থিতি ভীন্ন হতে পারতো। আমাদের সৌভাগ্য হয়ে আসতে পারতো আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধেও ভেতর দিয়ে গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকরা কিট উদ্ভাবন করলেন যা দিয়ে স্বল্প খরচে এবং ন্যূনতম সমেয় এন্টিজেন এবং এন্টিবডি পরিক্ষা করা যেতো। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই কিটের অনুমোদন নিয়ে টালবাহান করা হচ্ছে। হয় এই কিট নিয়ে দুর্নীতি ও ব্যবসা করতে পারবে না অথবা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরকারের সমালোচনা করে। এর বাই অনুমোদন না দেয়ার অন্য কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। জোনায়েদ সাকি সরকারের প্রতি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, অবিলম্বে এ কিটের অনুমোদন না দেয়া হলে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে, প্রয়োজনে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঘেরাও করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এই মহামারির মধ্যেও যে বাজেট ঘোষণা করা হলো তা একেরাইে গতানুগতিক। স্বাস্থ্য খাতে ১০ হাজার টাকার থোক বরাদ্দ ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসার কোন দিক নির্দেশনা এই এই বাজেটে। বাজেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায় সরকার নাগরিকদের চিকিৎসা ও জীবন রক্ষা নিয়ে কতটুকু উদ্বিগ্ন। জোনায়েদ সাকি এই বাজেটকে সম্পূর্ণ রিভিউ করে অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের দাবি জানান।
জোনায়েদ সাকি তার বক্তৃতায় গণসংহতি আন্দোলনের ৭ দফা দাবি মেনে জনবান্ধব স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি করেন। তিনি বলেন, আমরা বিনা চিকিৎসায় আর একটি মানুষেরও মৃত্যু দেখতে চাই না। আজ আমরা স্বাস্থ্য বিধি মেনে সংঘাত এড়িয়ে বিক্ষোভ করছি। কিন্তু পরিস্থিতির যদি বদল না ঘটে তাহলে বিক্ষোভের ধরণও পাল্টে যাবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জনের অফিসের সামনে ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শণ করা হয়।
গণসংহতি আন্দোলনের ৭ দফা নিন্মরূপ :
১. বাজেটের অন্তত ২০ ভাগ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো অর্থ বরাদ্দ ও তার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
২. অবিলম্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটের অনুমোদন দিয়ে গণ টেস্টিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রæততম সমযয়ে সারা দেশে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার পিসিআর টেস্টের সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
৩. শ্রমিক এলাকায় ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে পর্যাপ্ত কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেশন বা সংগনিরোধ এর সুবিধা তৈরি করতে হবে।
৪. হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অক্সিজেন সিলিন্ডারের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে। পর্যাপ্ত ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি ও আনুপাতিক হিসাবে ভেন্টিলেটর সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সকল হাসপাতালের সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বেসরকারি হাসপাতাল সাময়িকভাবে অধিগ্রহণ করতে হবে।
৫. সার্বজনীন স্বাস্থ্য সুবিধা বাস্তবায়নে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য হেলথ কার্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। রোগ প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা সেবা, অবকাঠামো উন্নয়ন, জনবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্য সেবা সুলভ ও স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে হবে।
৬. স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশনের অধীনে পরিচালনা করে রেগুলেটরি অথরিটি বা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য কার্যক্রম এর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
৭. স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নিযয়োগ, বদলী, পদোন্নতি, ঔষধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও পণ্য ক্রয়ে সকল দুর্নীতির তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।