সোমবার ● ৮ মার্চ ২০২১
প্রথম পাতা » ছবিঘর » করোনা দুর্যোগ নারীকে আরও বিপন্ন করেছে
করোনা দুর্যোগ নারীকে আরও বিপন্ন করেছে
করোনা দুর্যোগের মধ্যে এ বছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও করোনার অভিঘাত বেশী পড়েছে নারীদের উপর। বিশেষ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের উপর। বাংলাদেশে নারীরা মোট শ্রমশক্তির প্রায় ৩৭ শতাংশ। এরমধ্যে ৯২ ভাগ নারীরা কাজ করে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে। করোনা দুর্যোগ এই অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। গত এক বছরে এই খাতে কয়েক লক্ষ নারী কাজ হারিয়েছেন; আয় মারাত্মকভাবে আরো কমেছে কয়েক লক্ষের। এই সব পরিবারের অধিকাংশই ইতিমধ্যে দারিদ্রসীমার নীচে নেমে এসেছে। শহর-শিল্পাঞ্চল ছেড়ে অনেকে গ্রামেও ফিরে গেছেন। সেখানেও বিকল্প আয়ের বিশেষ কোন ব্যবস্থা হয়নি। সরকারের পক্ষ থেকে করোনা সংকট মোকাবেলায় যে সব আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেসব শ্রমজীবী কর্মজীবী নারীদের কাছে পৌঁছায়নি। ফলে জীবন জীবিকা নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা আর মারাত্মক টানা পোড়নে থাকা লক্ষ লক্ষ নারীদের পরিবারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে নানামুখী সমস্যা ও সংকট। পারিবারিক সম্পর্কগুলোও নানা ধরণের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। করোনা সংকটে প্রথম ক’মাসে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা বাসায় ছুটি কাটালেও অধিকাংশ নারীদের জীবনে এই সুযোগ আসেনি। পরিসংখ্যান বলছে এই সময়কালে পরিবার ও সমাজে নারীর উপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও সহিংসতা কমেনি, ক্ষেত্র বিশেষে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বাইরেও নারী নিরাপদ থাকেনি।
বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত নারী শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গার্হস্থ্য শ্রমের আর্থিক মূল্য এখনও পর্যন্ত নীতি নির্ধারকদের বিশেষ কোন মনোযোগ পায়নি। এ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় বিধানও এখনও কার্যকরি নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিল্প-কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠানে কর্ম পরিবেশের কিছু উন্নতি ঘটলেও এখনও কর্ম পরিবেশকে কোন ভাবে নিরাপদ বলা যাচ্ছে না। বরঞ্চ কর্ম-পরিবেশ এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। মজুরীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বৈষম্য ও বঞ্চনা অব্যাহত রয়েছে। অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে নারীরা এখন বিশাল ভূমিকা পালন করছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতি নির্ধারণে নারীদের এই বিরাট অবদানের উপযুক্ত মূল্যায়ণও নেই, স্বীকৃতও নেই। সংবিধানে নারী পুরুষের সমান অধিকারের কথা গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করা হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নারীরা এখনও পর্যন্ত এই সমান অধিকার অর্জন করতে পারেনি।
নারী বস্তুত: দ্বিবিধ শোষণের শিকার। একদিকে পুরুষতান্ত্রিক নির্যাতন-নিপীড়ন, আর অন্যদিকে শ্রেণীভিত্তিক শোষণ বঞ্চনা। পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারীদেরকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসাবে গণ্য করেনা। এই পুরুষতান্ত্রিকতার রয়েছে বহুধরণের অভিপ্রকাশ। আর বাজার অর্থনীতির দৌলতে নারীকেও অনেকখানি পণ্য করে তোলা হয়েছে। শ্রেণী শোষণের জাতাকলে নারীরাই সবচেয়ে বেশী নিষ্পেষিত। এর মধ্যে গরীব নারীর ও প্রান্তিক নারীদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। ধর্ষন, নিপীড়ন ও পাচারের শিকার বেশীরভাগ এই গরীব পরিবারের নারীরাই। যে কোন বড় রাজনৈতিক সংকটে বিপদেও পড়ে নারীরা। অনেক সুযোগসন্ধানীর মতন ধর্ম ব্যবসায়ীরা নানা ধরণের ফতোয়া জারি করে এই নারীদের বিরুদ্ধে। ধর্ম ব্যবসায়ীদের নারীবিদ্বেষী নানা ধরণের প্রচারণাও নারীদেরকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। দেশে ভোটের অধিকার না থাকায় সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীদের গুরুত্ব আরও হ্রাস পেয়েছে।
এ অবস্থা পরিবর্তনে আজ নারী জাগরণের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু নারী অধিকার ও মুক্তি অর্জনের এই লক্ষ অর্জন কোনভাবেই নারীর একার কাজ নয়। নারী পুরুষকে আজ সম্মিলিতভাবে এ অবস্থা পরিবর্তনে এগিয়ে আসতে হবে। এটাই হোক এবারকার নারী দিবসের শপথ।