মঙ্গলবার ● ১৪ জুলাই ২০২০
প্রথম পাতা » ছবিঘর » সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে রাঙামাটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে রাঙামাটিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
রাঙামাটি :: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যেও অনলাইন প্লাটফর্মে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে নানাভাবে অনলাইন সাইবার অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ই-মেইল, ব্লগ, যেকোনো ডিজিটাল কন্টেন্ট এর কমেন্ট/ মতামত বিভাগ ইত্যাদি।
তেমনি রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় সংঘবদ্ধ ভাবে অনলাইনে অপরাধী চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।
রাঙামাটি জেলার বরকল থানার মামলা নং : ০১ তারিখ ২২ জুন-২০২০ রাঙামাটি কগনিজেন্স আদালতের মামলা নং : ২০৯/২০২০ মামলার বাদি একজন পাহাড়ি নারীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধী চক্রটির সন্ধান পাওয়া যায়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানাযায়, গত ২০১৬ সালের ১লা অক্টোবর মাসে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় ছ্টো হরিণায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বাদি চাকুরীতে যোগদান করেন। কর্মস্থলে থাকার সুবাদে ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে ছোট হরিণা বাজারের ব্যবসায়ী নকুল চন্দ্র শর্মা, পিতা-মৃত সুধন চন্দ্র শর্মা, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা, থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা এর সাথে বাদির পরিচয় ঘটে। সেই সুবাদে নকুল চন্দ্র শর্মা বাদির অফিসে প্রায় সময় যাতায়াত করিত, এক পর্যায়ে তার সাথে বাদির ঘনিষ্ঠতার মাধ্যমে বন্ধুত্ব সর্ম্পক গড়ে উঠে। পরিচয় হওয়ার কারণে রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলায় ছ্টো হরিণা শাখায় বসে গত ১০ জুলাই-২০১৮ সালে ব্যবসায়ী নকুল চন্দ্র শর্মা তার ব্যবসার পুজির জন্য প্রথম কিস্তিতে নগদ সত্তর হাজার টাকা লোন হিসাবে বাদির নিকট থেকে গ্রহন করে। সত্তর হাজার টাকা লোন নেয়ার একমাস পর বিকাশের মাধ্যমে নকুল চন্দ্র শর্মা বাদির নিকট থেকে আবার ২২ আগষ্ট-২০১৮ সালে বিকাশের মাধ্যমে ২য় কিস্তিতে ত্রিশ হাজার টাকা লোন হিসাবে গ্রহন করে এবং বাদির পাওনা একলক্ষ টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দিবে বলে মৌখিক শর্ত দেয় । পরবর্তীতে বেশ কয়েকমাস পরে বাদি তার নিজের মুঠোফোন নাম্বার থেকে নকুল চন্দ্র শর্মার মুঠোফোন নাম্বার ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ লোন নেয়া মোট এক লক্ষ টাকা ফেরৎ চান। নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মত এক সপ্তাহ পর তার কাছ থেকে পাওনা টাকার জন্য মুঠোফোন ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ফোন দিলে সে বাদির নিকট থেকে আরো সময় চায়, এভাবে সময় ক্ষেপন করে নকুল চন্দ্র শর্মা বিভিন্ন অজুহাত দেখাতে থাকে অনেক সময়ে তার ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ দুইটি নাম্বারই বন্ধ রাখে।
বাদির পারিবারিক কাজে টাকার প্রয়োজনে নকুল চন্দ্র শর্মাকে তার নিকট থেকে বাদির পাওনাা একলক্ষ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করিলে নকুল চন্দ্র শর্মা গত ১১ জানুয়ারি-২০১৯ তারিখ ০১৮৬৬৬৭০০২৫ ও ০১৮৬৬৬৭০০২৬ ইমু নাম্বার থেকে বাদির ইমু নাম্বারে একটি পর্ণো ভিডিও পাঠায়।
নকুল চন্দ্র শর্মা বাদিকে ফোন করে বলে যে, বাদি যেন তার পাঠানো পর্ণো ভিডিও টি দেখেন। বাদি এক পর্যায়ে নকুল চন্দ্র শর্মার পাঠানো পর্ণো ভিডিও ক্লিপ দেখার পর হতভম্বব হয়ে পড়েন।
বাদি পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি দেখার পর কৌশলে তাকে এধরনের অসামাজিক ভিডিও ক্লিপ মুছে ফেলতে (ডিলেট করিতে) অনুরোধ জানান। নকুল চন্দ্র শর্মার নিকট থেকে লোন বাবদ বাদির পাওনা একলক্ষ টাকা ফেরৎ চাইলে সে অসামাজিক ভিডিও ক্লিপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশ করার হুমকি দেয় এবং বাদির নিকট থেকে আরো নকুল চন্দ্র শর্মা পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবি করে। বাদি তাকে অনুরোধ করেন যে, তার স্বামী অসুস্থ্য। নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মতো টাকা না দেওয়াতে সে বাদির নিকট থেকে তার ব্যবসার জন্য লোন নেয়া একলক্ষ টাকা ফেরৎ না দিয়ে বাদির ইচ্ছার বিরুদ্ধে গোপনে ধারন করা পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপ দেখিয়ে বাদিকে বার বার ব্যাক্লমেইলিং করিতে থাকে। সে বাদিকে মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখায়।
নকুল চন্দ্র শর্মার ব্যাক্লমেইলিং বাদি বুঝিতে পারিয়া ভয়ে বাদি তার সাথে সকল ধরনের যোগ যোগ বন্ধ করে দেয়। এর পর নকুল চন্দ্র শর্মা তার নতুন মুঠোফোন নাম্বার ০১৬৪৩১৭০২০, ০১৬৩১৯৯৩৬৩৭, ০১৮২৮৮০১৪২৯ থেকে ফোন দিয়ে বাদিকে বিরক্ত করে এবং তার সাথে কথা বলতে বাদিকে বাধ্য করে তার কথা মেনে বাদিকে চট্টগ্রাম যেতে বলে।
বিশ^াস ঘাতক ও প্রতারক নাপিত নকুল চন্দ্র শর্মার কথা মতো শেষে বাদি চট্টগ্রাম না যাওয়াতে এবং তার দাবিকৃত টাকা না পাঠানোর প্রেক্ষিতে পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি হরিণা বাজারে তার বন্ধু মোবাইল দোকানদার মো. সোহেল (মুঠোফোন নাম্বার-০১৮৪৫৮০৬৯০৬, ০১৬৩৫৪৭৭৭৬৮, ০১৬২৪০৯০৩১৯) ও মো. সুমন পারভেজ (মুঠোফোন নাম্বার-০১৬৮৭৫৯৩০৪৪, ০১৬১৬৪২৮৫২৮, ০১৬১৮৯০০৮৮০), উভয়ের পিতা- আব্দুল মালেক, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নিকট পাঠিয়ে দেয়।
চক্রটি মুঠোফোন নাম্বার থেকে ফোন করে তাদের দাবি মত টাকা দিতে বলে অন্যতায় গোপনে ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।
বাদি আর্থিক সংকটে থাকার পরও বিকাশের মাধ্যমে গত ৮ জানুয়ারি-২০২০ তারিখ প্রথম কিস্তিতে দশ হাজার, ১১ ফেব্রুয়ারি-২০২০ তারিখ ২য় কিস্তিতে দশ হাজার, ৭ মার্চ-২০২০ তারিখ দশ হাজার, মো. সোহেল ও মো. সুমন পারভেজকে তিন কিস্তিতে ত্রিশ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। এর পরও বাদির সাথে নকুল চন্দ্র শর্মা প্রতারক চক্রের ব্যাক্লমেইলিং বন্ধ হয়নি।
নতুন করে মো. ইউছুফ রানা (মুঠোফোন নাম্বার-০১৮২০৩৩০৮০১, পিতা-মৃত আলি আহম্মদ, গ্রাম- হরিণা বাজার এলাকা (আমতলা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, ও অমর শান্তি চাকমা (মুঠোফোন নাম্বার-০১৬৩২৬৮৩৭০৯,০১৬৩৮৫৬০৭৯২), পিতা- চিরনজীব চাকমা, মাতা- ইন্দ্রদেবী চাকমা, গ্রাম-কুসুমছড়ি, সুভলং, বর্তমান ঠিকানা- গ্রাম-ধনুবাগ-মাষ্টার পাড়া (সূর্যের হাসি ক্লিনিক ছ্টো হরিণা শাখা), থানা- বরকল, উপজেলা- বরকল, জেলা-রাঙামাটি পার্বত্য জেলা নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি দেখিয়ে বাদির নিকট থেকে পঞ্চাশ হাজার চাঁদা দাবি করে। তাদের দাবি কৃত চাঁদা না দিলে নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি স্থানীয়দের মাঝে প্রচার করে দেয়ার হুমকি দেয় এবং অস্ত্রধারীদের কাছে নকুল চন্দ্র শর্মার ধারণকৃত পর্নেগ্রাফি ভিডিও ক্লিপটি পৌছে দিয়ে বাদিকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। প্রতি নিয়ত নকুল চন্দ্র শর্মা প্রতাররক চক্র বাদিকে অনলাইনে যৌন হয়রানি ও মানষিক নির্যাতন করতে থাকে।
উল্লেখ্য, বেশ কিছু ভুয়া আইডি থেকে বাদির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে। বাদির ধারনা নকুল চন্দ্র শর্মা এবং তার বন্ধুরা (১৫-২০ জন) একটি সংঘবদ্ধ চক্র এসব হীন কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে।
গত ৩ মে ২০২০ ইংরেজি তারিখ সকাল বেলা ১১.০০ঘটিকার সময় বাদি তার কর্মস্থলেবসিয়া নিজের মোবাইল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকনিজস্ব আইডি থেকে অনলাইনে সংবাদ পড়াকালিন দেখেন কে বা কাহারা পেইসবুকে বাদির ছবি ব্যবহার করিয়া “…” নামে অসৎ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে একটি আইডি পরিচালনা করছে এবং “…” আইডি থেকে বাদির ছবি বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করে বাদিকে জড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের কুৎসিত ভাষায় লেখা রয়েছে এবং অশালীন ভিডিও (পর্ণোগ্রাফি) ওয়ালে পোষ্ট করা হয়েছে। বাদির মানহানি, ক্ষতিসাধন, জাতিগত ও পারিবারিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অসৎ উদ্দ্যেশ্যে করেছে মর্মে প্রতিয়মান হয়। এছাড়া মোবাইল নাম্বার ০১৮২০৪৫৩৬০, ০১৮২৮৮০১৪২৯, ০১৬৪৩৫১৭০২০, ০১৬৪২-৮৬৯৪৪০ এছাড়া একাধিকনাম্বার থেকে ফোন করে বাদিকে বিভিন্ন ধরনের খারাপ কথা বলে ব্যাক্লমেইলিং সহ বাদির প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে এমতবস্থায় বাদি মানষিক ভাবে সম্পূর্নভেঙ্গে পড়েছেন।
“…” আইডিসহ আরো বেশ কয়েকটি ভুয়া আইডি থেকে বাদিকে জড়িয়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষের কাছে খারাপ মেসেজসহ বাদির বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, উস্কানীমূলক, পারিবারিক-ব্যাক্তিগত ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করারমতো পোষ্ট দেওয়াতে বাদি স্বয়ং ব্যাক্তিগতভাবে পরিবার-পরিজন,আত্মীয়-স্বজনরা সংক্ষুব্ধ এবং বিরুপ মন্তব্য ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন। “…”সহ একটি চক্র বিভিন্ন আইডি থেকে আধুনিক ডিজিটাল যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা, গুজব, মানহানিকর ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবিষয়ে বাঘাইছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল চৌধুরী সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, রাখী খীসা ৫ জন আসামীদের বিরুদ্ধে বরকল থানায় মামলা নং-১, তারিখ ২২/০৬/২০২০ ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইনের ২৪ (২)/ ২৫ (২)/ ২৯/ ৩০/ ৩১ (২)/ ৩৫ (২) ২০১৮ মামলা করেন। আসামীদের আইনের আওতায় আনার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সাইবার ক্রাইম করে কেউ আইনের হাত থেকে রক্ষা পাবেনা বলে অপরাধীদের হুশিয়ারি দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
অনলাইনে হয়রানি বা সাইবার বুলিং কে নারীদের ক্ষেত্রে হালকাভাবে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, সাইবার বুলিং অধিকাংশ সময়েই নারীদের ব্যক্তিগত জীবনে মারাত্মক ঝুঁকির শিকার হতে পারে।
এবিষয়ে বরকল খানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.জসিম উদ্দিন সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, মামলা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার অগ্রগতি কার্যক্রম চলছে।যেকোন সময় আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এবিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেন সিএইচটি মিডিয়াকে বলেন, মামলার তদন্তভার আমি গ্রহণ করেছি এবং ঘটনাস্থলে সঙ্গীয় ফোর্সসহ গিয়েছি ঐ এলাকার মানচিত্র আমার কাছে রয়েছে। এছাড়া আসামীদের যেসকল মোবাইল নম্বর গুলি দেওয়া হয়েছে সেগুলির কল রেকর্ড আংশিক হাতে এসেছে, বাকীগুলোও কিছু দিনের মধ্যে চলে আসবে। এবং যেসমস্ত ফেইসবুক আইডিগুলি থেকে অপরাধ সংঘটিত করা হয়েছে সেসব আইডিগুলির তথ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঢাকা সিআইডিতে ফরেনসিক টেষ্ট রিপোর্টের জন্য পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যহত রেখেছি।
নারীদের প্রতিনিয়ত এমন সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়ার ঘটনা উন্নত-অনুন্নত সকল দেশেই কম-বেশি লক্ষ্য করা যায়। এমনকি সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে নারীরা নিজেদের পেশা পরিবর্তন এমনকি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ার ঘটনাও অহরহই ঘটছে।