রবিবার ● ১৭ নভেম্বর ২০২৪
প্রথম পাতা » ছবিঘর » রাঙামাটি জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি
রাঙামাটি জেলা পরিষদে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করার দাবিতে স্মারকলিপি
স্টাফ রিপোর্টার :: আজ রবিবার ১৭ নভেম্বর-২০২৪ রাঙামাটি শহরের কোর্ট বিল্ডিং এলাকায় হোটেল কসমস এর ৪র্থ তলায় রেস্টেুরেন্টের সম্মেলন কক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ পুনর্গঠন তালিকায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধির নাম অন্তর্ভূক্ত করার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর সাধারন সম্পাদক নির্মল বড়ুয়া মিলন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ০৭ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিষ্ট্রাব্দ তারিখ পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জনাব তাছলিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মাধ্যমে অন্তবর্তীকালীন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পূর্নগঠন করা হয়েছে।
সেই তালিকায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর কোন সদস্যর নাম না থাকায় এ অন্তর্বর্তীকালিন পরিষদ বৈষম্যহীন বলা যাচ্ছে না।
১৫ জনের মধ্যে চেয়ারম্যানসহ চাকমা জনগোষ্ঠীর ৬ জন, মারমা ২ জন, পাংখোয়া ২ জন, ত্রিপুরা ১ জন, মুসলমান ৩ জন ও হিন্দু ১ জন। ১৫ সদস্য বিশিষ্ট পরিষদের ৪টি জনগোষ্ঠীর লোকজন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে স্থান পেয়েছেন।
বৈষম্যের স্বীকার হয়েছে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীসহ আরো বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর লোকজন। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কাউখালী, রাজস্থলী, জুরাইছড়ি ও বরকল উপজেলার প্রতিনিধির নাম।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অনেক সদস্য তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৫৩ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ভাবে বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বৈষম্যের স্বীকার এবং বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন অবজ্ঞার স্বীকার।
একটি কথা বড়ুয়ারা পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেন যে, বড়ুয়ারা বাংলাদেশী তবে বাঙ্গালী নয়, বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি করলে কৌশলে বড়ুয়া সম্প্রদায়কে বাঙ্গালীদের সাথে সংযুক্ত করে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাসকারী বড়ুয়া জনগোষ্ঠীকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। বড়ুয়ারা শেখ হাসিনার এই ধরনের হীন কর্মকান্ডের জন্য নিন্দা জানান এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেন। সেই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসাবে অন্তর্ভুক্তির দাবিও করেন।
বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন বিগত বছর গুলোতে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যেমনি বঞ্চিত ছিল এখনো একই ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। গত ৫ আগষ্ট ২০২৪ খ্রিষ্ট্রাব্দ ছাত্র-শ্রমিক- জনতার আন্দোলনের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ পাবো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজনই এখনো সর্বত্র বিদ্যমান আছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদে যাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেশিরভাগ সদস্য জনগণের অপরিচিত এবং ফ্যাসিস্ট সরকারের দলীয়। এমনও আছে একই পরিবারের একাধিক সদস্য রয়েছে। যাহা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুনাম দারুন ভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিগত তিন মাসে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপক সাফল্য থাকলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকদেরকে নিয়োগ দেয়ার ফলে তা ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।
ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইতোমধ্যে ১০০ দিন পার করেছে, তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের রেখে যাওয়া অর্থনীতি পূর্ণ উদ্ধার করেছে এছাড়াও অনেক ভাল কাজ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাস্তবায়ন করেছে কিন্তু বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহন করায় এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখন সমালোচনার মধ্যে রয়েছে।
সাংবাদিকরা হচ্ছে সমাজের বিবেক এবং আয়না, বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর সাথে কেউ যেন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে না পারেন এজন্য আমাদের ২টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সিদ্ধান্ত ক্রমে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান এর মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও রাঙামাটি সদর জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, পিএসসি এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়। বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর দুই জনের জীবণবৃত্তান্ত যুক্ত করে স্মারকলিপি পাঠানো হয়। তারা ২ জনই বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর অত্যন্ত আস্থভাজন এবং বড়ুয়া সমাজের সর্বজন গ্রহন যোগ্য ব্যক্তি।
এব্যাপারে ২টি সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম এবং স্থানীয় রাজনৈতিক, পেশাবীবি ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় সকল প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়।
অবিলম্বে ঘোষিত প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বড়ুয়া জনগোষ্ঠী থেকে প্রতিনিধি দিয়ে নতুনভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদ তালিকায় বড়ুয়া জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধির নাম অন্তর্ভূক্ত করার জোরালো দাবি করা হয়।
এসময় বেনুবন উত্তম আনন্দ বৌদ্ধ বিহারের সভাপতি ও বিহার অধ্যক্ষ ভদন্ত অদিতা নন্দ ভিক্ষু, পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা. বাদল বরণ বড়ুয়া, রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার আহবায়ক ত্রিদিব বড়ুয়া টিপু, সদস্য সচিব ধীমান বড়ুয়া, রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার সদস্য শ্যামল চৌধুরী, সম্ভু বড়ুয়া, সুজিত বড়ুয়া, সমিরন বড়ুয়া, মিলটন বড়ুয়া, মাখন লাল বড়ুয়া, সনৎ কান্তি বড়ুয়া, দেবদত্ত চৌধুরী, সুচিত্র বড়ুয়া, ইলেন বড়ুয়া, হৃদয় বড়ুয়া, খোকন বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন এর সদস্য জিনপদ বড়ুয়া, রাসেল বড়ুয়া, দিলীপ বড়ুয়া, নিশান বড়ুয়া, বাপ্পী বড়ুয়া, জয়মনি বড়ুয়া, পলাশ বড়ুয়া, পূনিমা বড়ুয়া, স্বপ্না বড়ুয়া, পার্বত্য চট্টগ্রাম বড়ুয়া সংগঠন ও রাঙামাটি বড়ুয়া জনকল্যাণ সংস্থার প্রমূখ সদস্যগণ এবং বিভিন্ন অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।