বৃহস্পতিবার ● ৬ জুলাই ২০২৩
প্রথম পাতা » ছবিঘর » সংবিধানের ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ বাতিলের দাবিতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
সংবিধানের ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ বাতিলের দাবিতে ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
সংবিধানের বিতর্কিত ‘পঞ্চদশ সংশোধনী’ পাসের এক যুগ উপলক্ষে স্ব স্ব জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
আজ রবিবার (২ জুলাই ২০২৩) সকাল ১০ টায় মানিকছড়ি উপজেলা সদরের গচ্ছাবিল ধর্মঘর হতে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি সিএমবি এলাকার সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবারো ধর্মঘর বটতলায় এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে মানিকছড়িসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ২ হাজারের অধিক মানুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে ইউপিডিএফের মানিকছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক ক্যাহ্লাচিং মারমার সভাপতিত্বে ও অংচাহ্লা মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক হ্লাচিং মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনে কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি শান্ত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সভাপতি পাইচি মারমা ও এলাকার জনপ্রতিনিধি সুদোঅং মারমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক হ্লাচিং মারমা বলেন, ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হওয়া বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়ার ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। পাকিস্তান আমলে বাঙালিরা যেমনি উর্দুকে রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মানেনি, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণও বাঙালি জাতীয়তাবাদকে বরদাস্ত করবে না।
এন্টি চাকমা বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার পরিচয়কে মুছে দেয়ার লক্ষ্যে উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া হয়ছে। অপরদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামে খুন-গুম, অন্যায় দমন-পীড়ন জারি রেখে পাহাড়ি জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে ফেলে দেয়া হচ্ছে। তাই, জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে নারীসহ সকলকে সচেতন হতে হবে এবং সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।
শান্ত চাকমা বলেন, বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরুদ্ধে দেশে বহু আলোচনা-সমালোচনা, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হলেও সরকার এখনো গণবিরোধী সংশোধনী পরিবর্তন করেনি। রাষ্ট্রীয় দমন নীতির ফলে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাদের অস্তিত্ব আরো সংকটের মুখে পড়েছে। একদিকে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমন-পীড়ন অন্যদিকে মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্টীগুলোকে খুন-গুম করা হচ্ছে। বান্দরবানে মুখোশ দুর্বৃত্তদের লেলিয়ে দিয়ে বম জাতিগোষ্টীর মানুষ অপহরণ ও কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে ঠান্ডামাথায় হত্যা করা হয়েছে।
পাইচি মারমা বলেন, উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়া পঞ্চদশ সংশোধনীর কালো আইন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ মেনে নেয়নি এবং মেনে নেবে না। তাই জনগণ নিজেদের অধিকারের প্রশ্নে সকল অপশক্তি ও গণবিরোধী সংবিধান আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
নীতি চাকমা বলেন, পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিসত্তার অস্তিত্ব বিলীন করতে এ সরকার বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্যেই পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে সাংবিধানিকভাবে দেশের জাতিসত্তাগুলোকে বাঙালি বানানো হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক শাসনের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে অন্যায় দমন-পীড়ন, নারী নির্যাতন, ভূমি বেদখল প্রতিনিয়ত ঘটেই চলছে। ২০১৮ সালে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে সেনাবাহিনী কর্তৃক দুই মারমা নারীর ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় চাকমা রানি য়েন য়েনকে পর্যন্ত লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার অগণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় থেকে সর্বত্র ফ্যাসিবাদ কায়েম করে জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে সকল জাতিসত্তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
জনপ্রতিনিধি সুদোঅং মারমা বলেন, সরকার শুধু উগ্রজাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়নি, আমাদেরকে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ উপাধিও দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ করতে হবে।
ইউপিডিএফ নেতা ও সমাবেশের সভাপতি ক্যহ্লাচিং মারমা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সংখ্যাগরিষ্টতার জোরে জনগণের দাবি-দাওয়া সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাস করে পাহাড়িসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর ওপর বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়েছে। সংবিধানে জাতিসত্তাগুলোর অস্তিত্ব অস্বীকার করার মধ্য দিয়ে সরকারের অগণতান্ত্রিক ও কর্তৃত্ববাদী শাসনেরই প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু এই চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তাবাদ পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ মেনে নেয়নি, কখনো মেনে নেবে না। এই সমাবেশ থেকে আমরা অবিলম্বে সরকারকে এই সংশোধনী বাতিল করে নতুন সংবিধান প্রণয়নের মাধ্যমে সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছি।
তিন আরো বলেন, সরকার শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যে সেনা, সেটলার দিয়ে ভূমি বেদখল-উচ্ছেদ, নারী নির্যাতন, অন্যায়-অবিচারসহ সব ধরনের চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে নব্যমুখোশ বাহিনীর মতো ঠ্যাঙারে বাহিনী গঠন করে জনগণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামকে স্তব্দ করে দেয়ার হীন চক্রান্ত চালাচ্ছে। কিন্তু ইউপিডিএফ জনগণকে সাথে নিয়ে যে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছে সে লড়াই অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
তিনি চাপিয়ে দেয়া উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ও জাতির অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে এসে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।